পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাআত সংখ্যা, কত প্রকার ও কি কি
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাআত সংখ্যা
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। ফরজের পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়াক্তেই ওয়াজিব, সুন্নাত এবং নফল নামাজ রয়েছে। নামাজের রাকাআত নিয়ে রয়েছে মতপার্থক্য। ন্যূনতম যা পড়া দরকার তার বিবরণ তুলে ধরা হলো-
সালাতুল ফজর
ফজরে প্রথমে দুই রাকাআত সুন্নাত এবং পরে দুই রাকাআত ফরজ।
সালাতুল জোহর
যুহরের নামাজ প্রথমে চার রাকাআত সুন্নাত। তারপর চার রাকাআত ফরজ এবং তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। এ দশ রাকাআত পড়া উত্তম। কেউ কেউ সর্বশেষ দুই রাকআত নফল নামাজও পড়ে। এ হিসেবে জোহরের নামাজ ১২ রাকাআত আদায় করা হয়।
সালাতুল আসর
আসরের নামাজ চার রাকাআত পড়া ফরজ। কেউ কেউ ফরজের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত নামাজ পড়ে থাকে।
সালাতুল মাগরিব
মাগরিবে প্রথম তিন রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। কেউ কেউ সুন্নাতের পর দুই রাকাআত নফল পড়ে থাকে।
সালাতুল ইশা
ইশার নামাজে চার রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। অতপর তিন রাকাআত বিতর। বিতর পড়া ওয়াজিব। অনেকে ফরজের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত এবং বিতরের পর দুই রাকাআত নফলও নামাজ পড়ে থাকে।
পরিশেষে
সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ফজর ৪ রাকাআত; জোহর ১০ রাকাআত; আসর ৪ রাকাআত, মাগরিব ৫ রাকাআত এবং ইশার ৯ রাকাআত নামাজ যথাযথ আদায়ে যত্নবান হওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়াক্তের আগে পরের সুন্নাত ও নফল আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন। দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম অবলম্বনে।
প্রতিদিন একজন মুসলমানকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রথম ওয়াক্ত হল “ফজর নামাজ” সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত। এরপর “যোহর ওয়াক্ত” বেলা দ্বিপ্রহর হতে “আছর ওয়াক্ত”-এর আগ পর্যন্ত। তৃতীয় ওয়াক্ত “আছর ওয়াক্ত” যা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। চতুর্থ ওয়াক্ত হচ্ছে “মাগরীব” যা সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই আরম্ভ হয় এবং এর ব্যপ্তিকাল প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। “মাগরীব ওয়াক্ত” এর প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর আরম্ভ হয় “এশা ওয়াক্ত” এবং এর ব্যপ্তি প্রায় “সুবেহ সাদিক”-এর আগ পর্যন্ত।
উপরোক্ত ৫ টি ফরজ নামাজ ছাড়াও এশা নামাজের পরে বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সুন্নত নামাজ ও মুসলমানরা আদায় করে থাকে।
কোন ওয়াক্ত-এর নামাজ কয় রাকাত তা দেয়া হল :
১. ফযর = সুন্নাত ২, ফরজ ২(রাকাত)
২. যোহর = সুন্নাত ৪, ফরজ ৪, সুন্নাত ২, নফল ২(রাকাত)
৩. আসর = সুন্নাত ৪, ফরজ ৪(রাকাত)
৪. মাগরিব = ফরজ ৩, সুন্নাত ২, নফল ২(রাকাত)
৫. এশা = সুন্নাত ৪, ফরজ ৪, সুন্নাত ২, নফল ২, বিতির ৩(রাকাত)
বিঃ দ্রঃ নফল সম্পূর্ণ নিজের উপর আপনি চাইলে বেশি পড়তে পারেন। তবে ফজর এবং আসরের সময় কোন নফল নামায পড়বেন না
নামাজ কত প্রকার ও কি কি
নামজ ৪ প্রকার। যথা:-ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব।
অধিকাংশ ইমামের মতে পাচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাজ ওয়াজিব নয়।
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মতে বিতর, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহার নামাজও ওয়াজিব এ অভিমতের উপরই ফতোয়া।
অন্যান্য ইমামগণের মতে এসব নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
বিতর নামাজ কত রাকাত ও তা কয় সালামে পড়তে হয়?
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মতে, বিতর নামাজ তিন রাকাত।
তিন রাকাত বিতর নামাজ একই সালামে আদায় করা।
তিন রাকাতেই সূরা ফাতেহার সাথে অন্য কোন সূরা পড়া এবং তৃতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর রুকুর পূর্বে দু’আয়ে কুনূত পাঠ করা,ওয়াজিব।
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর মতে দু’আয়ে কুনূত কেবল রমজানের শেষ ১৫ দিন সুন্নত (বছরের অন্যান্য সময়ে পড়া সুন্নত নয়।)
অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দু’আয়ে কুনূত পড়া সুন্নত।
ফজরের নামাযে দু’আয়ে কুনূত পড়ার হুকুম কি?
ফজরের নামাজে দু’আয়ে কুনূত পড়া বেদাত।
কিন্তু ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর মতে ফজরের নামাজে দু’আয়ে কুনূত পড়া সুন্নত।
বিতরের নামাজে কোন কোন সূরা পাঠ করা মুস্তাহাব?
বিতর নামাজের প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা’ দ্বিতীয় রাকাতে ক্বুল ইয়া আইয়্যূহাল কাফিরুন ও তৃতীয় রাকাতে ক্বুলহুওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করা মুস্তাহাব।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)
জুমার ফরজ নামাজ : জোহরের ফরজ নামাজ চার রাকাত হলেও জুমার হলো দুই রাকাত। অবশ্য এর আগে দুইটি খুতবা রয়েছে, যা দুই রাকাত নামাজের স্থলাভিষিক্ত। (আল-মুসান্নাফ লি ইবনে আবি শাইবা : ৫৩৬৭, ৫৩৭৪)। এজন্য খুতবার সময় উপস্থিত থাকা এবং তা শোনার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত প্রসঙ্গে হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘জুমার নামাজ দুই রাকাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং সফরের নামাজ দুই রাকাত। এটাই পূর্ণ সংখ্যা, অসম্পূর্ণ নয়। এ বিধান স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মুখ নিসৃত।’ (নাসাঈ : ১৮৯৪, ইবনে মাজাহ : ১০৬৩)।
জুমার আগে ও পরের সুন্নত নামাজ : জুমার আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। তবে জুমার পরের চার রাকাত সুন্নতের সঙ্গে আরও দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম।
হজরত আলী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং জুমার নামাজের পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। চার রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ১৬১৭)।
এ হাদিসের সনদের সব রাবি পরিচিত, প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য। মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আস-সাহমি সম্পর্কে কেউ কেউ আপত্তি তুললেও ইমাম ইবনে আদি তার আল-কামিল কিতাবে বলেছেন, ‘এ রাবির ব্যাপারে অসুবিধার কিছু নেই।’ (আল-কামিল : ১৯১-১৯২)। ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য রাবির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (কিতাবুস সিকাত : ৭২)। এ বিষয়ে আরও বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ৩৯৫৯, নাসবুর রায়াহ : ২৪৮)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে একসঙ্গে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ : ১১২৯)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)। হজরত সালেম (রা.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (মুসলিম : ২০৭৮, তিরমিজি : ৫২১)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (তিরমিজি : ৫২৩, মুসান্নাফু আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)।
হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবু ইসহাক বলেন, হজরত আলী (রা.) জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবদুর রাজ্জাক এটিই গ্রহণ করেছেন। (মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করা উচিত।’ (শারহু মায়ানিল আসার : ৯৫)।
জুমার দিনের নফল নামাজ : জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়া উচিত এবং সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা এসে হাজির হন। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে প্রবেশ করে তাদের জন্য উট, দ্বিতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য গরু, তৃতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ছাগল, চতুর্থ ভাগে যারা আসে তাদের জন্য মুরগি ও সর্বশেষ পঞ্চম ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ডিম কোরবানি বা দান করার সমান সওয়াব লেখেন।
আর যখন ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন তখন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যান।’ (বোখারি: ৯২৯, মুসলিম : ২০২১)। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো পুরুষ জুমার দিন যদি গোসল করে, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে অথবা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে অতঃপর জুমার নামাজে যায় ও বসার জন্য দুই জনকে আলাদা করে না এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলেন তখন চুপ থাকে, তাহলে তার অন্য জুমা পর্যন্ত গোনাহ মাফ করা হয়।’ (বোখারি : ৮৪৩)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে অতঃপর জুমার নামাজে যায়, এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে খুতবা শুনতে চুপ থাকে যতক্ষণ না ইমাম খুতবা শেষ করেন। এরপর তার সঙ্গে নামাজ পড়ে। তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সাত দিনের সঙ্গে আরও তিন দিনসহ ১০ দিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ (মুসলিম : ২০২৪)। এসব হাদিস থেকে বোঝা যায়, জুমার দিন তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া উচিত এবং শুধু নির্ধারিত চার রাকাত নামাজ আদায় করা নয় বরং তাহিয়াতুল অজু দুই রাকাত ও তাহিয়াতুল মসজিদ দুই রাকাতসহ সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। আরও বোঝা গেল, খুতবার সময় কোনো নামাজ নেই।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
নফল নামাজ বা সুন্নত নামাজের প্রকার ও গুরুত্ব
ফরয ও ওয়াজিব নামাজ ব্যতীত শরীয়তসিদ্ধ অন্যান্য নামাজকে নফল নামাজ বলা হয়, যার মধ্যে সুন্নত নামাজও শামিল রয়েছে।
নফল নামাজের ফজিলত
১-নফল নামাজ আল্লাহর ভালোবাসা আকৃষ্ট করার মাধ্যম। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন,«আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে এ পর্যন্ত যে আমি তাকে মহব্বত করে ফেলি। আর আমি যখন তাকে মহব্বত করে ফেলি আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে আঘাত করে। আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটে। যদি সে আমার কাছে কোনো প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনা কবুল করি। যদি সে আমার আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দিই।»(বর্ণনায় বুখারী)
২-নফল নামাজ ফরজের ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাজ করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,«কিয়ামতের দিন প্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে তা হলো নামাজ। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের লক্ষ্য করে বলবেন-যদিও তিনি এ বিষয়ে সমধিক জ্ঞানী-, তোমরা আমার বান্দার নামাজ দেখ, সে কি পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছে, না অপূর্ণাঙ্গরূপে? যদি তা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় হয়ে থাকে তবে তা পূর্ণাঙ্গরূপেই লিখা হবে। আর যদি অপূর্ণাঙ্গরূপে আদায় হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তাআলা বলবেন: দেখ, আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কি না? নফল নামাজ থেকে থাকলে আল্লাহ তাআলা বলবেন,«আমার বান্দার ফরয নামাজ নফল নামাজ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ করে দাও। এরপর অন্যান্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
নফল নামাজ ঘরে পড়া উত্তম
নফল নামাজ ঘরে পড়া মসজিদে পড়ার চেয়ে উত্তম। তবে ওই নফলের কথা আলাদা যা জামাতের সাথে আদায়ের নির্দেশ এসেছে, যেমন তারাবীর নামাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,«নিশ্চয় ঘরে আদায় করা নামাজ উত্তম নামাজ, তবে ফরয ব্যতীত।»(বর্ণনায় বুখারী)
নফল নামাজের প্রকার
নফল নামাজের প্রকার
প্রথমত: সুন্নতে রাতেবা বা ফরয নামাজের
আগে পিছের নামাজ
ফরয নামাজের আগে-পিছের মোট নামাজ হলো দশ রাকাত বা বারো রাকাত। আর তা হলো:
-ফজরের পূর্বে দু রাকাত।
যোহরের পূর্বে দু রাকাত বা চার রাকাত এবং যোহরের পরে দু রাকাত।
-মাগরিবের পরে দু রাকাত।
-ইশার পরে দু রাকাত। ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,«আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দশ রাকাত নামাজের কথা সংরক্ষণ করেছি: যোহরের পূর্বে দু রাকাত, যোহরের পরে দু রাকাত, মাগরিবের পরে ঘরে দু রাকাত, ইশার পরে ঘরে দু রাকাত এবং ফজরের পূর্বে দু রাকাত।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
আয়েশা রাযি. থেকেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে, «তবে তিনি যোহরের পূর্বে চার রাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন।»(বর্ণনায় মুসলিম)
সুন্নতসমূহের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফজরের দু রাকাত সুন্নত, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো পরিত্যাগ করেননি। আয়েশা রাযি. বলেন,« নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দু রাকাত নামাজের তুলনায় অন্যকোনো নফল নামাজের ক্ষেত্রে এত যত্নবান ছিলেন না।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
ফজরের এ দু রাকাত হালকা করে আদায় করা সুন্নত। তবে খেয়াল রাখতে হবে ওয়াজিবগুলো যেন ত্রুটিমুক্তভাবে আদায় হয়। আয়েশা রাযি.
পরবর্তী সুন্নত
ফরয নামাজ
পূর্ববর্তী সুন্নত
ــــــــ
ফজর
দু রাকাত
দু রাকাত
যোহর
চার রাকাত
ــــــــ
আসর
ــــــــ
দু রাকাত
মাগরিব
ــــــــ
দু রাকাত
ইশা
ــــــــ
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, «নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দু রাকাত সুন্নত হালকাভাবে পড়তেন। এমনকি আমি মনে মনে বলতাম, তিনি সূরা ফাতিহা পড়লেন কিনা?(বর্ণনায় বুখারী)
ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে তা কাযা করারও বৈধতা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যে ফজরের সুন্নত পড়ল না সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেয়।»(বর্ণনায় তিরমিযী)
যোহরের পূর্বে ও পরে
বিতরের নামাজ ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,« নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বিতরের নামাজ ওয়াজিব করেছেন, অতঃপর তোমরা বিতর আদায় করো হে আহলে কুরআন!»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
বেতরের নামাজ আদায়-পদ্ধতি
1. সর্বনিম্ন বেতর হলো এক রাকাত। আর সবার্ধিক হলো এগারো রাকাত অথবা তেরো রাকাত। দু রাকাত দু রাকাত করে পড়ে পরিশেষে এক রাকাত পড়ে পুরো
2. নামাজকে বেতর তথা বেজোড় বানিয়ে দেবে।
3. তিন রাকাত হলো সর্বনিম্ন পূর্ণাঙ্গ বেতর। তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তাকবীর দেবে ও হাত উঠাবে। এরপর নিয়ম মুতাবিক হাত বেঁধে দুআয়ে কুনুত পড়বে এবং রুকুতে যাবে। আলেমদের কারও কারও মতানুযায়ী, দু রাকাত পড়ে সালাম ফেরাবে। এরপর ভিন্নভাবে এক রাকাত পড়বে ও সালাম ফেরাবে। প্রথম দু রাকাতের পর তাশাহ্হুদ না পড়েও তৃতীয় রাকাত পড়া যাবে। আর বেতরের নামাজে মুস্তাহাব হলো প্রথম রাকাতে ফাতিহার পর সূরা আ»লা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আল কাফিরুন পড়া। আর তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া। উবায় ইবনে কা»ব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেতরের প্রথম রাকাতে «সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ»লা» এবং দ্বিতীয় রাকাতে «কুল ইয়া আইউহাল কাফিরুন» ও তৃতীয় রাকাতে «কুল হুয়াল্লাহু আহাদ» পড়তেন।(বর্ণনায় নাসায়ী)
বেতরের সময়
ইশার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। তবে রাতের তৃতীয়াংশে তা আদায় করা উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,«নিশ্চয় শেষ রাতের নামাজের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া হবে।»(বর্ণনায় মুসলিম)
বেতরের সময় দুআ
বেতরের সময় শেষ রাকাতে রুকুর পূর্বে দুআ পড়ার বিধান রয়েছে। অতঃপর তাকবীর দেয়া হবে ও দু হাত উঠানো হবে। হাদীসে যেসব দুআর কথা এসেছে, তা পড়বে। তন্মধ্যে :
اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك، ونؤمن بك، ونتوكل عليك، ونثني عليك الخير، ونشكرك، ولا نكفرك، ونخلع ونترك من يفجرك، اللهم إياك نعبد، ولك نصلي، ونسجد، وإليك نسعى ونحفد، ونرجو رحمتك و نخشى عذابك، إن عذابك بالكفار ملحق
«হে আল্লাহ, আমরা আপনার সাহায্য প্রার্থনা করি। আপনার কাছে ক্ষমা চাই। আপনার প্রতি ঈমান রাখি। আপনার প্রতি তাওয়াক্কুল করি। আপনার শুকরিয়া আদায় করি। আমরা আপনাকে অস্বীকার করি না। যারা আপনার অবাধ্যতায় লিপ্ত তাদেরকে আমরা বর্জন ও পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ, আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি। আপনার উদ্দেশেই নামাজ পড়ি ও সিজদা দিই। আপনার পানেই আমরা ধাবিত হই এবং আপনার আনুগত্যে দ্রুত আগাই। আমরা আপনার রহমত প্রত্যাশা করি। আপনার আযাবকে ভয় করি। নিশ্চয় আপনার আযাব কাফেরদের সাথেই যুক্ত হবে।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
আরেকটি দুআ হলো:
اللهم اهدني فيمن هديت، وعافني فيمن عافيت، وتولني فيمن توليت، وبارك لي فيما أعطيت، وقني شر ما قضيت، فإِنك تقضي ولا يقضي عليك، إِنه لا يذل من واليت، ولا يعز من عاديت، تباركت ربنا وتعاليت
«হে আল্লাহ, আপনি যাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি যাদেরকে সুস্থতা দান করেছেন আমাকেও সুস্থতা দান করে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি যাদের অভিভাবক হয়েছেন আমাকেও তাদের মধ্যে শামিল করুন। আমাকে যা দিয়েছেন তাতে আপনি বরকত দিন। আপনি যা ফয়সালা করেছেন তার মধ্যে যা মন্দ, তা থেকে আমাকে রক্ষা করুন। আপনিই প্রকৃত ফয়সালাকারী, আপনার ওপর ফয়সালা আরোপ করার কেউ নেই। আপনি যার অভিভাকত্ব গ্রহণ করেছেন তাকে কেউ অপদস্থ করতে পারে না। আর আপনি যার শত্রু হয়েছেন তাকে কেউ ইজ্জত দিতে পারে না। আপনি বরকতময় হে আমাদের রব, আপনি সর্বোচ্চ।»(বর্ণনায় তিরমিযী)
মাসায়েল
সুন্নত হলো বেতরের নামাজের পর তিনবার «سبحان الملك القدوس» বলা। তৃতীয়বার আওয়াজ উঁচু করে টেনে টেনে বলা। এর সাথে « رب الملائكة والروح» বাড়িয়ে বলাও বৈধ।(বর্ণনায় বুখারী)
দুআর পর মুখমণ্ডলে হাত বুলানো বা মাসেহ করা শরীয়তসম্মত নয়। হোক তা বেতরের দুআয় বা অন্য কোনো দুআয়। কেননা এ ব্যাপারে কোনো বিশুদ্ধ হাদীস আসেনি।
দিনের বেলায় বেতরের নামাজ কাযা করা
দিনের বেলায় বেতরের নামাজ কাযা করা বৈধ। তবে কাযা করার সময় বেজোড় সংখ্যায় না পড়ে জোড় সংখ্যায় পড়তে হবে। অর্থাৎ তিন রাকাতের জায়গায় চার রাকাত পড়তে হবে। আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন,«রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যখন রাতের বেলায় অসুস্থতার কারণে রাতের নামাজ ছুটে যেত, তখন তিনি দিনের বেলায় বারো রাকাত নামাজ আদায় করে নিতেন।
তৃতীয়ত: তারাবীর নামাজ
তারাবী হলো মাহে রমজানের রাতের নামাজ।
এ নামাজের নাম এ জন্য তারাবী রাখা হয়েছে যে, মানুষ এতে প্রতি চার রাকাত পরপর আরাম করে নেয়, যাকে আরবিতে তারবীহা বলে। সে হিসেবে এ নামাজের নাম তারাবী রাখা হয়েছে।
তারাবীর নামাজের ফজিলত
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যে ব্যক্তি ছাওয়াবপ্রাপ্তির দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রমজানের রাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম )
তারাবীর নামাজের হুকুম
তারাবীর নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে তারাবীর নামাজ আদায়কে শরীয়তভুক্ত করেছেন। তিনি মসজিদে সাহাবীদেরকে নিয়ে কয়েক রাত তারাবীর নামাজ আদায় করেছেন। এরপর মুসলমানদের ওপর ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ছেড়ে দিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামও পরবর্তীতে এ নামাজ আদায় করে গেছেন।
(বর্ণনায় মুসলিম)
তারাবীর নামাজের রাকাত সংখ্যা
আহলে ইলমের কারও কারও নিকট তারাবীর নামাজ বিশ রাকাত । সায়েব রাযি. থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, «উমর রাযি.এর যুগে তারা বিশ রাকাত নামাজের মাধ্যমে রমজানের রাতযাপন করতেন।»(বর্ণনায় মুসলিম)
আর কারো কারো নিকট এগারো রাকাআত।
মাসায়েল
1. তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত ব্যক্তির তাহাজ্জুদের নামাজ ছেড়ে দেয়া মাকরুহ। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,«হে আবদুল্লাহ, তুমি অমুক ব্যক্তির মতো হয়ো না। সে তাহাজ্জুদের মাধ্যমে কিয়ামুল লাইল করত, পরবর্তীতে সে তা ছেড়ে দিয়েছে।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
2. স্বামী তাহাজ্জুদের জন্য উঠলে তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়া মুস্তাহাব। তদ্রুপভাবে স্ত্রীরও উচিত স্বামীকে জাগিয়ে দেয়া। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যখন রাতের বেলায় স্বামী তার স্ত্রীকে জাগিয়ে দেবে,অতঃপর দু রাকাত নামাজ পড়বে, তবে তাদেরকে যিকরকারী ও যিকরকারীনীদের মধ্যে লিখে নেয়া হবে।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
3. যদি তাহাজ্জুদের নামাজে কারও ঘুম চলে আসে, তবে উচিত হবে নামাজ ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়া, যাতে ঘুম চলে যায়। আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যদি তোমাদের কেউ নামাজে তন্দ্রাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সে যেন শুয়ে নেয়, যতক্ষণ না ঘুম চলে যায়।» (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
4. রাতের তৃতীয়াংশে দুআ-ইস্তিগফার করা মুস্তাহাব। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন, অতঃপর বলেন: কে আছে আমাকে ডাকার, অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে গুনাহ মাফ চাওয়ার, অতঃপর আমি তার গুনাহ মাফ করে দেব?(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)চতুর্থত: চাশতের নামাজ
সূর্য এক বর্ষা পরিমাণ উর্ধ্বে উঠার পর যে নামাজ আদায় করা হয়, তাকেই চাশতের নামাজ বলে। আরবিতে বলে সালাতুদ্দুহা। এ নামাজের সময় শুরু হয় সূর্যোদয়ের পর এক বর্ষা পরিমাণ ঊর্ধ্বে উঠে গেলে। পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে যাওয়ার সামান্য সময় পূর্ব পর্যন্ত এ নামাজের সময় থাকে।
চাশতের নামাজের ফজিলত
আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসীতে বলেন,«হে আদম সন্তান, আমার জন্য তুমি দিনের প্রথম ভাগে চার রাকাত নামাজ পড়ো, আমি তোমার দিনের শেষ ভাগের জন্য যথেষ্ট হব।» (বর্ণনায় মুসলিম)
চাশতের নামাজের রাকাত সংখ্যা
ফকীহদের কারও কারও নিকট, চাশতের নামাজ দু রাকাত, চার রাকত, ছয় রাকাত এবং আট রাকাত আদায় করা চলে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম থেকে এরূপ প্রমাণিত।
পঞ্চমত: তাহিয়াতুল মসজিদের নামাজ
এ নামাজ হলো দু রাকাত যা মসজিদে প্রবেশকারীর মসজিদে বসার পূর্বে আদায় করা শরীয়তসিদ্ধ। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বেই দু রাকাত নামাজ পড়ে নেয়।»(বর্ণনায় মুসলিম)
বসার পূর্বেই যদি সরাসরি ফরয নামাজ পড়া হয় অথবা ফরজের পূর্বের সুন্নত নামাজ পড়া হয়, তবে তা তাহিয়াতুল মসজিদের জন্য যথেষ্ট হবে। আলাদাভাবে আর তাহিয়াতুল মসজিদ পড়তে হবে না।
ষষ্ঠত: ইস্তিখারার নামাজ
ইস্তিখারার নামাজ দু রাকাত, যা কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়লে আদায় করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ নামাজটি তার সাহাবীদেরকে শেখাতেন, ঠিক কুরআনের কোনো সূরা শেখানোর মতোই।
ইস্তিখারার দুআ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজ শুরু করার ইচ্ছা করে তখন যেন সে দু রাকাত নফল নামাজ পড়ে। এরপর বলে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي، وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ،وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي، وَمَعَاشِي، وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي -قَالَ- وَيُسَمِّى حَاجَتَهُ
«হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার কাছে যা ভালো তা প্রত্যাশ্যা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার কাছে শক্তি চাচ্ছি। আমি আপনার মহান অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। নিশ্চয় আপনি ক্ষমতাবান আর আমি অক্ষম। আপনি জ্ঞানবান আর আমি জ্ঞানহীন। আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞানী। হে আল্লাহ, আপনার জ্ঞান মুতাবিক, যদি এই কাজ আমার দীন, আমার জীবিকা এবং শেষ পরিণতির নিরিখে উত্তম হয়ে থাকে তবে তা আমার জন্য নির্ধারিত করুন এবং সহজ করে দিন। এরপর তাতে আপনি রবকত দিন। আর যদি আপনার জ্ঞান মুতাবিক এই কাজ আমার দীন, আমার জীবিকা, আমার শেষ পরিণতির নিরিখে অকল্যাণকর হয়ে থাকে তবে তা আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিন। এবং আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে নিন। আর যেখানেই কল্যাণ থাকুক আমার জন্য তা নির্ধারণ করুন। এরপর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন।) এ দুআ পড়ার পর ইস্তিখারাকারী যে কাজের জন্য ইস্তিখারা করছে তা উল্লেখ করবে|»(বর্ণনায় বুখারী)
ইস্তিখারার আলামত
ইস্তিখারা বার বার করা যায়। তবে যে বিষয়কে কেন্দ্র করে ইস্তিখারা করা হলো সে বিষয়ক কোনো স্বপ্ন দেখতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। বরং ইস্তিখারাকারীর উচিত হবে, যে বিষয়ে ইস্তিখারা করেছে এবং আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করেছে, সে বিষয় করতে শুরু করা, যদি না তা গুনাহের কাজ হয় অথবা তাতে আত্মীয়তা-সম্পর্ক কর্তিত হয়। যদি কাজ সম্পন্ন হয় তবে এটাই তার জন্য খায়ের। আর যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তবে এতেই তার কল্যাণ নিহিত।
সপ্তমত: তাহিয়াতুল অজুর দু রাকাত নামাজ
আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাল রাযি. কে বলেছেন, «হে বিলাল, তুমি আমাকে এমন একটি আমলের কথা বল যা তুমি ইসলাম গ্রহণের পর করেছ এবং যে ব্যাপারে তুমি সবথেকে বেশি আশাবাদী; কেননা আমি জান্নাতের সম্মুখে তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেরেছি।»(বর্ণনায় বুখারী) বিলাল রাযি. বললেন,«আমি তেমন কোনো আশার আমল করিনি তবে আমি রাতে বা দিনে যখনই অজু করেছি তখনই আমি ওই অজু দ্বারা যতটুকু সম্ভব নামাজ পড়েছি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে তাহাজ্জুদের নামাজ
রাতের নামাজ করটিসোল হরমোনের নির্গমন কমিয়ে দিতে সাহায্য করে, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার কয়েক ঘন্টা আগে। আর এ সময়টাই হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশের সময়। এ হরমোনের নির্গমন কমে যাওয়ার অর্থ হলো হঠাৎ রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষা পাওয়া। আর হঠাৎ রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়ার অর্থ সুগারের রোগীদের মারত্মক ধরনের হুমকির মুখে পড়া।
সাধারণ নফল নামাজ
তা হলো এমন নামাজ, যা কোনো স্থান বা কারণের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
এ ধরনের নামাজ নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যেকোনো সময়ই আদায় করা বৈধ।
সাধারণ নফল নামাজের কয়েকটি উদাহরণ
রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদের নামায)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«ফরজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ।»(বর্ণনায় মুসলিম)
অন্যত্র তিনি বলেছেন,«নিশ্চয় জান্নাতে কিছু কক্ষ রয়েছে যার বহির্ভাগ ভিতর থেকে দেখা যাবে এবং ভিতরের ভাগ বাইরে থেকে দেখা যাবে। এরপর এক বেদুইন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, এটি কার জন্য, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন,«যে ভালো কথা বলল, খাবার খাওয়াল, দিনের পর দিন রোজা রাখল এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ল।»(বর্ণনায় তিরমিযী)
নামাজের নিষিদ্ধ সময়
1. ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকে সূর্যোদয়ের পর এক বর্শা পরিমাণ উর্ধ্বে উঠা পর্যন্ত। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পর প্রায় বিশ মিনিট পর্যন্ত।
2. সূর্য মধ্য-আকাশে থাকাবস্থায় যতক্ষণ না তা ঢলে যায়।
3. আসরের নামাজ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
এর প্রমাণ উকবা ইবনে আমের রাযি. এর হাদীস,«তিনটি সময় রয়েছে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নামাজ পড়তে ও মৃত ব্যক্তিদেরকে কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেন: সূর্যোদয় থেকে উর্ধ্বে উঠা পর্যন্ত। মধ্যদুপুরে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত। সূর্য যখন অস্ত যাওয়ার উপক্রম করে তখন থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।»(বর্ণনায় মুসলিম
কার্টেসীঃ=
https://www.muslimbd24.com/
https://www.sonalinews.com
http://www.kholakagojbd.com/religion/12885
http://secrethealthcarebd.blogspot.com/2016/06/blog-post.html
https://www.al-feqh.com/bn
http://www.bangladesherkhabor.net/Religious/17290
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। ফরজের পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়াক্তেই ওয়াজিব, সুন্নাত এবং নফল নামাজ রয়েছে। নামাজের রাকাআত নিয়ে রয়েছে মতপার্থক্য। ন্যূনতম যা পড়া দরকার তার বিবরণ তুলে ধরা হলো-
সালাতুল ফজর
ফজরে প্রথমে দুই রাকাআত সুন্নাত এবং পরে দুই রাকাআত ফরজ।
সালাতুল জোহর
যুহরের নামাজ প্রথমে চার রাকাআত সুন্নাত। তারপর চার রাকাআত ফরজ এবং তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। এ দশ রাকাআত পড়া উত্তম। কেউ কেউ সর্বশেষ দুই রাকআত নফল নামাজও পড়ে। এ হিসেবে জোহরের নামাজ ১২ রাকাআত আদায় করা হয়।
সালাতুল আসর
আসরের নামাজ চার রাকাআত পড়া ফরজ। কেউ কেউ ফরজের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত নামাজ পড়ে থাকে।
সালাতুল মাগরিব
মাগরিবে প্রথম তিন রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। কেউ কেউ সুন্নাতের পর দুই রাকাআত নফল পড়ে থাকে।
সালাতুল ইশা
ইশার নামাজে চার রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাত। অতপর তিন রাকাআত বিতর। বিতর পড়া ওয়াজিব। অনেকে ফরজের পূর্বে চার রাকাআত সুন্নাত এবং বিতরের পর দুই রাকাআত নফলও নামাজ পড়ে থাকে।
পরিশেষে
সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ফজর ৪ রাকাআত; জোহর ১০ রাকাআত; আসর ৪ রাকাআত, মাগরিব ৫ রাকাআত এবং ইশার ৯ রাকাআত নামাজ যথাযথ আদায়ে যত্নবান হওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়াক্তের আগে পরের সুন্নাত ও নফল আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন। দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম অবলম্বনে।
কোন ওয়াক্তে কত রাকাত নামায বিদ্যমান
প্রতিদিন একজন মুসলমানকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রথম ওয়াক্ত হল “ফজর নামাজ” সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত। এরপর “যোহর ওয়াক্ত” বেলা দ্বিপ্রহর হতে “আছর ওয়াক্ত”-এর আগ পর্যন্ত। তৃতীয় ওয়াক্ত “আছর ওয়াক্ত” যা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। চতুর্থ ওয়াক্ত হচ্ছে “মাগরীব” যা সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই আরম্ভ হয় এবং এর ব্যপ্তিকাল প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। “মাগরীব ওয়াক্ত” এর প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর আরম্ভ হয় “এশা ওয়াক্ত” এবং এর ব্যপ্তি প্রায় “সুবেহ সাদিক”-এর আগ পর্যন্ত।
উপরোক্ত ৫ টি ফরজ নামাজ ছাড়াও এশা নামাজের পরে বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সুন্নত নামাজ ও মুসলমানরা আদায় করে থাকে।
কোন ওয়াক্ত-এর নামাজ কয় রাকাত তা দেয়া হল :
১. ফযর = সুন্নাত ২, ফরজ ২(রাকাত)
২. যোহর = সুন্নাত ৪, ফরজ ৪, সুন্নাত ২, নফল ২(রাকাত)
৩. আসর = সুন্নাত ৪, ফরজ ৪(রাকাত)
৪. মাগরিব = ফরজ ৩, সুন্নাত ২, নফল ২(রাকাত)
৫. এশা = সুন্নাত ৪, ফরজ ৪, সুন্নাত ২, নফল ২, বিতির ৩(রাকাত)
বিঃ দ্রঃ নফল সম্পূর্ণ নিজের উপর আপনি চাইলে বেশি পড়তে পারেন। তবে ফজর এবং আসরের সময় কোন নফল নামায পড়বেন না
নামাজ কত প্রকার ও কি কি
নামজ ৪ প্রকার। যথা:-ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব।
অধিকাংশ ইমামের মতে পাচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাজ ওয়াজিব নয়।
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মতে বিতর, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহার নামাজও ওয়াজিব এ অভিমতের উপরই ফতোয়া।
অন্যান্য ইমামগণের মতে এসব নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
বিতর নামাজ কত রাকাত ও তা কয় সালামে পড়তে হয়?
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মতে, বিতর নামাজ তিন রাকাত।
তিন রাকাত বিতর নামাজ একই সালামে আদায় করা।
তিন রাকাতেই সূরা ফাতেহার সাথে অন্য কোন সূরা পড়া এবং তৃতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর রুকুর পূর্বে দু’আয়ে কুনূত পাঠ করা,ওয়াজিব।
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর মতে দু’আয়ে কুনূত কেবল রমজানের শেষ ১৫ দিন সুন্নত (বছরের অন্যান্য সময়ে পড়া সুন্নত নয়।)
অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় দু’আয়ে কুনূত পড়া সুন্নত।
ফজরের নামাযে দু’আয়ে কুনূত পড়ার হুকুম কি?
ফজরের নামাজে দু’আয়ে কুনূত পড়া বেদাত।
কিন্তু ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর মতে ফজরের নামাজে দু’আয়ে কুনূত পড়া সুন্নত।
বিতরের নামাজে কোন কোন সূরা পাঠ করা মুস্তাহাব?
বিতর নামাজের প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা’ দ্বিতীয় রাকাতে ক্বুল ইয়া আইয়্যূহাল কাফিরুন ও তৃতীয় রাকাতে ক্বুলহুওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করা মুস্তাহাব।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)
জুমার ফরজ নামাজ : জোহরের ফরজ নামাজ চার রাকাত হলেও জুমার হলো দুই রাকাত। অবশ্য এর আগে দুইটি খুতবা রয়েছে, যা দুই রাকাত নামাজের স্থলাভিষিক্ত। (আল-মুসান্নাফ লি ইবনে আবি শাইবা : ৫৩৬৭, ৫৩৭৪)। এজন্য খুতবার সময় উপস্থিত থাকা এবং তা শোনার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত প্রসঙ্গে হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘জুমার নামাজ দুই রাকাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং সফরের নামাজ দুই রাকাত। এটাই পূর্ণ সংখ্যা, অসম্পূর্ণ নয়। এ বিধান স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মুখ নিসৃত।’ (নাসাঈ : ১৮৯৪, ইবনে মাজাহ : ১০৬৩)।
জুমার আগে ও পরের সুন্নত নামাজ : জুমার আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। তবে জুমার পরের চার রাকাত সুন্নতের সঙ্গে আরও দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম।
হজরত আলী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং জুমার নামাজের পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। চার রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ১৬১৭)।
এ হাদিসের সনদের সব রাবি পরিচিত, প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য। মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আস-সাহমি সম্পর্কে কেউ কেউ আপত্তি তুললেও ইমাম ইবনে আদি তার আল-কামিল কিতাবে বলেছেন, ‘এ রাবির ব্যাপারে অসুবিধার কিছু নেই।’ (আল-কামিল : ১৯১-১৯২)। ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য রাবির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (কিতাবুস সিকাত : ৭২)। এ বিষয়ে আরও বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ৩৯৫৯, নাসবুর রায়াহ : ২৪৮)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে একসঙ্গে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ : ১১২৯)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)। হজরত সালেম (রা.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (মুসলিম : ২০৭৮, তিরমিজি : ৫২১)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (তিরমিজি : ৫২৩, মুসান্নাফু আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)।
হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবু ইসহাক বলেন, হজরত আলী (রা.) জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবদুর রাজ্জাক এটিই গ্রহণ করেছেন। (মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করা উচিত।’ (শারহু মায়ানিল আসার : ৯৫)।
জুমার দিনের নফল নামাজ : জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়া উচিত এবং সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা এসে হাজির হন। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে প্রবেশ করে তাদের জন্য উট, দ্বিতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য গরু, তৃতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ছাগল, চতুর্থ ভাগে যারা আসে তাদের জন্য মুরগি ও সর্বশেষ পঞ্চম ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ডিম কোরবানি বা দান করার সমান সওয়াব লেখেন।
আর যখন ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন তখন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যান।’ (বোখারি: ৯২৯, মুসলিম : ২০২১)। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো পুরুষ জুমার দিন যদি গোসল করে, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে অথবা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে অতঃপর জুমার নামাজে যায় ও বসার জন্য দুই জনকে আলাদা করে না এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলেন তখন চুপ থাকে, তাহলে তার অন্য জুমা পর্যন্ত গোনাহ মাফ করা হয়।’ (বোখারি : ৮৪৩)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে অতঃপর জুমার নামাজে যায়, এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে খুতবা শুনতে চুপ থাকে যতক্ষণ না ইমাম খুতবা শেষ করেন। এরপর তার সঙ্গে নামাজ পড়ে। তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সাত দিনের সঙ্গে আরও তিন দিনসহ ১০ দিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ (মুসলিম : ২০২৪)। এসব হাদিস থেকে বোঝা যায়, জুমার দিন তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া উচিত এবং শুধু নির্ধারিত চার রাকাত নামাজ আদায় করা নয় বরং তাহিয়াতুল অজু দুই রাকাত ও তাহিয়াতুল মসজিদ দুই রাকাতসহ সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। আরও বোঝা গেল, খুতবার সময় কোনো নামাজ নেই।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
নফল নামাজ বা সুন্নত নামাজের প্রকার ও গুরুত্ব
ফরয ও ওয়াজিব নামাজ ব্যতীত শরীয়তসিদ্ধ অন্যান্য নামাজকে নফল নামাজ বলা হয়, যার মধ্যে সুন্নত নামাজও শামিল রয়েছে।
নফল নামাজের ফজিলত
১-নফল নামাজ আল্লাহর ভালোবাসা আকৃষ্ট করার মাধ্যম। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন,«আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে এ পর্যন্ত যে আমি তাকে মহব্বত করে ফেলি। আর আমি যখন তাকে মহব্বত করে ফেলি আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে আঘাত করে। আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটে। যদি সে আমার কাছে কোনো প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনা কবুল করি। যদি সে আমার আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দিই।»(বর্ণনায় বুখারী)
২-নফল নামাজ ফরজের ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাজ করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,«কিয়ামতের দিন প্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে তা হলো নামাজ। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের লক্ষ্য করে বলবেন-যদিও তিনি এ বিষয়ে সমধিক জ্ঞানী-, তোমরা আমার বান্দার নামাজ দেখ, সে কি পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছে, না অপূর্ণাঙ্গরূপে? যদি তা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় হয়ে থাকে তবে তা পূর্ণাঙ্গরূপেই লিখা হবে। আর যদি অপূর্ণাঙ্গরূপে আদায় হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তাআলা বলবেন: দেখ, আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কি না? নফল নামাজ থেকে থাকলে আল্লাহ তাআলা বলবেন,«আমার বান্দার ফরয নামাজ নফল নামাজ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ করে দাও। এরপর অন্যান্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
নফল নামাজ ঘরে পড়া উত্তম
নফল নামাজ ঘরে পড়া মসজিদে পড়ার চেয়ে উত্তম। তবে ওই নফলের কথা আলাদা যা জামাতের সাথে আদায়ের নির্দেশ এসেছে, যেমন তারাবীর নামাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,«নিশ্চয় ঘরে আদায় করা নামাজ উত্তম নামাজ, তবে ফরয ব্যতীত।»(বর্ণনায় বুখারী)
নফল নামাজের প্রকার
নফল নামাজের প্রকার
প্রথমত: সুন্নতে রাতেবা বা ফরয নামাজের
আগে পিছের নামাজ
ফরয নামাজের আগে-পিছের মোট নামাজ হলো দশ রাকাত বা বারো রাকাত। আর তা হলো:
-ফজরের পূর্বে দু রাকাত।
যোহরের পূর্বে দু রাকাত বা চার রাকাত এবং যোহরের পরে দু রাকাত।
-মাগরিবের পরে দু রাকাত।
-ইশার পরে দু রাকাত। ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,«আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দশ রাকাত নামাজের কথা সংরক্ষণ করেছি: যোহরের পূর্বে দু রাকাত, যোহরের পরে দু রাকাত, মাগরিবের পরে ঘরে দু রাকাত, ইশার পরে ঘরে দু রাকাত এবং ফজরের পূর্বে দু রাকাত।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
আয়েশা রাযি. থেকেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে, «তবে তিনি যোহরের পূর্বে চার রাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন।»(বর্ণনায় মুসলিম)
সুন্নতসমূহের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফজরের দু রাকাত সুন্নত, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো পরিত্যাগ করেননি। আয়েশা রাযি. বলেন,« নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দু রাকাত নামাজের তুলনায় অন্যকোনো নফল নামাজের ক্ষেত্রে এত যত্নবান ছিলেন না।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
ফজরের এ দু রাকাত হালকা করে আদায় করা সুন্নত। তবে খেয়াল রাখতে হবে ওয়াজিবগুলো যেন ত্রুটিমুক্তভাবে আদায় হয়। আয়েশা রাযি.
পরবর্তী সুন্নত
ফরয নামাজ
পূর্ববর্তী সুন্নত
ــــــــ
ফজর
দু রাকাত
দু রাকাত
যোহর
চার রাকাত
ــــــــ
আসর
ــــــــ
দু রাকাত
মাগরিব
ــــــــ
দু রাকাত
ইশা
ــــــــ
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, «নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দু রাকাত সুন্নত হালকাভাবে পড়তেন। এমনকি আমি মনে মনে বলতাম, তিনি সূরা ফাতিহা পড়লেন কিনা?(বর্ণনায় বুখারী)
ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে তা কাযা করারও বৈধতা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যে ফজরের সুন্নত পড়ল না সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেয়।»(বর্ণনায় তিরমিযী)
যোহরের পূর্বে ও পরে
বিতরের নামাজ ওয়াজিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,« নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বিতরের নামাজ ওয়াজিব করেছেন, অতঃপর তোমরা বিতর আদায় করো হে আহলে কুরআন!»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
বেতরের নামাজ আদায়-পদ্ধতি
1. সর্বনিম্ন বেতর হলো এক রাকাত। আর সবার্ধিক হলো এগারো রাকাত অথবা তেরো রাকাত। দু রাকাত দু রাকাত করে পড়ে পরিশেষে এক রাকাত পড়ে পুরো
2. নামাজকে বেতর তথা বেজোড় বানিয়ে দেবে।
3. তিন রাকাত হলো সর্বনিম্ন পূর্ণাঙ্গ বেতর। তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তাকবীর দেবে ও হাত উঠাবে। এরপর নিয়ম মুতাবিক হাত বেঁধে দুআয়ে কুনুত পড়বে এবং রুকুতে যাবে। আলেমদের কারও কারও মতানুযায়ী, দু রাকাত পড়ে সালাম ফেরাবে। এরপর ভিন্নভাবে এক রাকাত পড়বে ও সালাম ফেরাবে। প্রথম দু রাকাতের পর তাশাহ্হুদ না পড়েও তৃতীয় রাকাত পড়া যাবে। আর বেতরের নামাজে মুস্তাহাব হলো প্রথম রাকাতে ফাতিহার পর সূরা আ»লা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আল কাফিরুন পড়া। আর তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া। উবায় ইবনে কা»ব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেতরের প্রথম রাকাতে «সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ»লা» এবং দ্বিতীয় রাকাতে «কুল ইয়া আইউহাল কাফিরুন» ও তৃতীয় রাকাতে «কুল হুয়াল্লাহু আহাদ» পড়তেন।(বর্ণনায় নাসায়ী)
বেতরের সময়
ইশার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। তবে রাতের তৃতীয়াংশে তা আদায় করা উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,«নিশ্চয় শেষ রাতের নামাজের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া হবে।»(বর্ণনায় মুসলিম)
বেতরের সময় দুআ
বেতরের সময় শেষ রাকাতে রুকুর পূর্বে দুআ পড়ার বিধান রয়েছে। অতঃপর তাকবীর দেয়া হবে ও দু হাত উঠানো হবে। হাদীসে যেসব দুআর কথা এসেছে, তা পড়বে। তন্মধ্যে :
اللهم إنا نستعينك، ونستغفرك، ونؤمن بك، ونتوكل عليك، ونثني عليك الخير، ونشكرك، ولا نكفرك، ونخلع ونترك من يفجرك، اللهم إياك نعبد، ولك نصلي، ونسجد، وإليك نسعى ونحفد، ونرجو رحمتك و نخشى عذابك، إن عذابك بالكفار ملحق
«হে আল্লাহ, আমরা আপনার সাহায্য প্রার্থনা করি। আপনার কাছে ক্ষমা চাই। আপনার প্রতি ঈমান রাখি। আপনার প্রতি তাওয়াক্কুল করি। আপনার শুকরিয়া আদায় করি। আমরা আপনাকে অস্বীকার করি না। যারা আপনার অবাধ্যতায় লিপ্ত তাদেরকে আমরা বর্জন ও পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ, আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি। আপনার উদ্দেশেই নামাজ পড়ি ও সিজদা দিই। আপনার পানেই আমরা ধাবিত হই এবং আপনার আনুগত্যে দ্রুত আগাই। আমরা আপনার রহমত প্রত্যাশা করি। আপনার আযাবকে ভয় করি। নিশ্চয় আপনার আযাব কাফেরদের সাথেই যুক্ত হবে।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
আরেকটি দুআ হলো:
اللهم اهدني فيمن هديت، وعافني فيمن عافيت، وتولني فيمن توليت، وبارك لي فيما أعطيت، وقني شر ما قضيت، فإِنك تقضي ولا يقضي عليك، إِنه لا يذل من واليت، ولا يعز من عاديت، تباركت ربنا وتعاليت
«হে আল্লাহ, আপনি যাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি যাদেরকে সুস্থতা দান করেছেন আমাকেও সুস্থতা দান করে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি যাদের অভিভাবক হয়েছেন আমাকেও তাদের মধ্যে শামিল করুন। আমাকে যা দিয়েছেন তাতে আপনি বরকত দিন। আপনি যা ফয়সালা করেছেন তার মধ্যে যা মন্দ, তা থেকে আমাকে রক্ষা করুন। আপনিই প্রকৃত ফয়সালাকারী, আপনার ওপর ফয়সালা আরোপ করার কেউ নেই। আপনি যার অভিভাকত্ব গ্রহণ করেছেন তাকে কেউ অপদস্থ করতে পারে না। আর আপনি যার শত্রু হয়েছেন তাকে কেউ ইজ্জত দিতে পারে না। আপনি বরকতময় হে আমাদের রব, আপনি সর্বোচ্চ।»(বর্ণনায় তিরমিযী)
মাসায়েল
সুন্নত হলো বেতরের নামাজের পর তিনবার «سبحان الملك القدوس» বলা। তৃতীয়বার আওয়াজ উঁচু করে টেনে টেনে বলা। এর সাথে « رب الملائكة والروح» বাড়িয়ে বলাও বৈধ।(বর্ণনায় বুখারী)
দুআর পর মুখমণ্ডলে হাত বুলানো বা মাসেহ করা শরীয়তসম্মত নয়। হোক তা বেতরের দুআয় বা অন্য কোনো দুআয়। কেননা এ ব্যাপারে কোনো বিশুদ্ধ হাদীস আসেনি।
দিনের বেলায় বেতরের নামাজ কাযা করা
দিনের বেলায় বেতরের নামাজ কাযা করা বৈধ। তবে কাযা করার সময় বেজোড় সংখ্যায় না পড়ে জোড় সংখ্যায় পড়তে হবে। অর্থাৎ তিন রাকাতের জায়গায় চার রাকাত পড়তে হবে। আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন,«রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যখন রাতের বেলায় অসুস্থতার কারণে রাতের নামাজ ছুটে যেত, তখন তিনি দিনের বেলায় বারো রাকাত নামাজ আদায় করে নিতেন।
তৃতীয়ত: তারাবীর নামাজ
তারাবী হলো মাহে রমজানের রাতের নামাজ।
এ নামাজের নাম এ জন্য তারাবী রাখা হয়েছে যে, মানুষ এতে প্রতি চার রাকাত পরপর আরাম করে নেয়, যাকে আরবিতে তারবীহা বলে। সে হিসেবে এ নামাজের নাম তারাবী রাখা হয়েছে।
তারাবীর নামাজের ফজিলত
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যে ব্যক্তি ছাওয়াবপ্রাপ্তির দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রমজানের রাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম )
তারাবীর নামাজের হুকুম
তারাবীর নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে তারাবীর নামাজ আদায়কে শরীয়তভুক্ত করেছেন। তিনি মসজিদে সাহাবীদেরকে নিয়ে কয়েক রাত তারাবীর নামাজ আদায় করেছেন। এরপর মুসলমানদের ওপর ফরয হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ছেড়ে দিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামও পরবর্তীতে এ নামাজ আদায় করে গেছেন।
(বর্ণনায় মুসলিম)
তারাবীর নামাজের রাকাত সংখ্যা
আহলে ইলমের কারও কারও নিকট তারাবীর নামাজ বিশ রাকাত । সায়েব রাযি. থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, «উমর রাযি.এর যুগে তারা বিশ রাকাত নামাজের মাধ্যমে রমজানের রাতযাপন করতেন।»(বর্ণনায় মুসলিম)
আর কারো কারো নিকট এগারো রাকাআত।
মাসায়েল
1. তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত ব্যক্তির তাহাজ্জুদের নামাজ ছেড়ে দেয়া মাকরুহ। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,«হে আবদুল্লাহ, তুমি অমুক ব্যক্তির মতো হয়ো না। সে তাহাজ্জুদের মাধ্যমে কিয়ামুল লাইল করত, পরবর্তীতে সে তা ছেড়ে দিয়েছে।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
2. স্বামী তাহাজ্জুদের জন্য উঠলে তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়া মুস্তাহাব। তদ্রুপভাবে স্ত্রীরও উচিত স্বামীকে জাগিয়ে দেয়া। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যখন রাতের বেলায় স্বামী তার স্ত্রীকে জাগিয়ে দেবে,অতঃপর দু রাকাত নামাজ পড়বে, তবে তাদেরকে যিকরকারী ও যিকরকারীনীদের মধ্যে লিখে নেয়া হবে।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
3. যদি তাহাজ্জুদের নামাজে কারও ঘুম চলে আসে, তবে উচিত হবে নামাজ ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়া, যাতে ঘুম চলে যায়। আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যদি তোমাদের কেউ নামাজে তন্দ্রাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সে যেন শুয়ে নেয়, যতক্ষণ না ঘুম চলে যায়।» (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
4. রাতের তৃতীয়াংশে দুআ-ইস্তিগফার করা মুস্তাহাব। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন, অতঃপর বলেন: কে আছে আমাকে ডাকার, অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে গুনাহ মাফ চাওয়ার, অতঃপর আমি তার গুনাহ মাফ করে দেব?(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)চতুর্থত: চাশতের নামাজ
সূর্য এক বর্ষা পরিমাণ উর্ধ্বে উঠার পর যে নামাজ আদায় করা হয়, তাকেই চাশতের নামাজ বলে। আরবিতে বলে সালাতুদ্দুহা। এ নামাজের সময় শুরু হয় সূর্যোদয়ের পর এক বর্ষা পরিমাণ ঊর্ধ্বে উঠে গেলে। পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে যাওয়ার সামান্য সময় পূর্ব পর্যন্ত এ নামাজের সময় থাকে।
চাশতের নামাজের ফজিলত
আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসীতে বলেন,«হে আদম সন্তান, আমার জন্য তুমি দিনের প্রথম ভাগে চার রাকাত নামাজ পড়ো, আমি তোমার দিনের শেষ ভাগের জন্য যথেষ্ট হব।» (বর্ণনায় মুসলিম)
চাশতের নামাজের রাকাত সংখ্যা
ফকীহদের কারও কারও নিকট, চাশতের নামাজ দু রাকাত, চার রাকত, ছয় রাকাত এবং আট রাকাত আদায় করা চলে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম থেকে এরূপ প্রমাণিত।
পঞ্চমত: তাহিয়াতুল মসজিদের নামাজ
এ নামাজ হলো দু রাকাত যা মসজিদে প্রবেশকারীর মসজিদে বসার পূর্বে আদায় করা শরীয়তসিদ্ধ। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বেই দু রাকাত নামাজ পড়ে নেয়।»(বর্ণনায় মুসলিম)
বসার পূর্বেই যদি সরাসরি ফরয নামাজ পড়া হয় অথবা ফরজের পূর্বের সুন্নত নামাজ পড়া হয়, তবে তা তাহিয়াতুল মসজিদের জন্য যথেষ্ট হবে। আলাদাভাবে আর তাহিয়াতুল মসজিদ পড়তে হবে না।
ষষ্ঠত: ইস্তিখারার নামাজ
ইস্তিখারার নামাজ দু রাকাত, যা কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়লে আদায় করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ নামাজটি তার সাহাবীদেরকে শেখাতেন, ঠিক কুরআনের কোনো সূরা শেখানোর মতোই।
ইস্তিখারার দুআ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজ শুরু করার ইচ্ছা করে তখন যেন সে দু রাকাত নফল নামাজ পড়ে। এরপর বলে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي، وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ،وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي، وَمَعَاشِي، وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي -قَالَ- وَيُسَمِّى حَاجَتَهُ
«হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার কাছে যা ভালো তা প্রত্যাশ্যা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার কাছে শক্তি চাচ্ছি। আমি আপনার মহান অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। নিশ্চয় আপনি ক্ষমতাবান আর আমি অক্ষম। আপনি জ্ঞানবান আর আমি জ্ঞানহীন। আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞানী। হে আল্লাহ, আপনার জ্ঞান মুতাবিক, যদি এই কাজ আমার দীন, আমার জীবিকা এবং শেষ পরিণতির নিরিখে উত্তম হয়ে থাকে তবে তা আমার জন্য নির্ধারিত করুন এবং সহজ করে দিন। এরপর তাতে আপনি রবকত দিন। আর যদি আপনার জ্ঞান মুতাবিক এই কাজ আমার দীন, আমার জীবিকা, আমার শেষ পরিণতির নিরিখে অকল্যাণকর হয়ে থাকে তবে তা আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিন। এবং আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে নিন। আর যেখানেই কল্যাণ থাকুক আমার জন্য তা নির্ধারণ করুন। এরপর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন।) এ দুআ পড়ার পর ইস্তিখারাকারী যে কাজের জন্য ইস্তিখারা করছে তা উল্লেখ করবে|»(বর্ণনায় বুখারী)
ইস্তিখারার আলামত
ইস্তিখারা বার বার করা যায়। তবে যে বিষয়কে কেন্দ্র করে ইস্তিখারা করা হলো সে বিষয়ক কোনো স্বপ্ন দেখতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। বরং ইস্তিখারাকারীর উচিত হবে, যে বিষয়ে ইস্তিখারা করেছে এবং আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করেছে, সে বিষয় করতে শুরু করা, যদি না তা গুনাহের কাজ হয় অথবা তাতে আত্মীয়তা-সম্পর্ক কর্তিত হয়। যদি কাজ সম্পন্ন হয় তবে এটাই তার জন্য খায়ের। আর যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তবে এতেই তার কল্যাণ নিহিত।
সপ্তমত: তাহিয়াতুল অজুর দু রাকাত নামাজ
আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাল রাযি. কে বলেছেন, «হে বিলাল, তুমি আমাকে এমন একটি আমলের কথা বল যা তুমি ইসলাম গ্রহণের পর করেছ এবং যে ব্যাপারে তুমি সবথেকে বেশি আশাবাদী; কেননা আমি জান্নাতের সম্মুখে তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেরেছি।»(বর্ণনায় বুখারী) বিলাল রাযি. বললেন,«আমি তেমন কোনো আশার আমল করিনি তবে আমি রাতে বা দিনে যখনই অজু করেছি তখনই আমি ওই অজু দ্বারা যতটুকু সম্ভব নামাজ পড়েছি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে তাহাজ্জুদের নামাজ
রাতের নামাজ করটিসোল হরমোনের নির্গমন কমিয়ে দিতে সাহায্য করে, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার কয়েক ঘন্টা আগে। আর এ সময়টাই হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশের সময়। এ হরমোনের নির্গমন কমে যাওয়ার অর্থ হলো হঠাৎ রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষা পাওয়া। আর হঠাৎ রক্তের সুগার বেড়ে যাওয়ার অর্থ সুগারের রোগীদের মারত্মক ধরনের হুমকির মুখে পড়া।
সাধারণ নফল নামাজ
তা হলো এমন নামাজ, যা কোনো স্থান বা কারণের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
এ ধরনের নামাজ নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যেকোনো সময়ই আদায় করা বৈধ।
সাধারণ নফল নামাজের কয়েকটি উদাহরণ
রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদের নামায)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«ফরজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ।»(বর্ণনায় মুসলিম)
অন্যত্র তিনি বলেছেন,«নিশ্চয় জান্নাতে কিছু কক্ষ রয়েছে যার বহির্ভাগ ভিতর থেকে দেখা যাবে এবং ভিতরের ভাগ বাইরে থেকে দেখা যাবে। এরপর এক বেদুইন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, এটি কার জন্য, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন,«যে ভালো কথা বলল, খাবার খাওয়াল, দিনের পর দিন রোজা রাখল এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ল।»(বর্ণনায় তিরমিযী)
নামাজের নিষিদ্ধ সময়
1. ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকে সূর্যোদয়ের পর এক বর্শা পরিমাণ উর্ধ্বে উঠা পর্যন্ত। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পর প্রায় বিশ মিনিট পর্যন্ত।
2. সূর্য মধ্য-আকাশে থাকাবস্থায় যতক্ষণ না তা ঢলে যায়।
3. আসরের নামাজ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
এর প্রমাণ উকবা ইবনে আমের রাযি. এর হাদীস,«তিনটি সময় রয়েছে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নামাজ পড়তে ও মৃত ব্যক্তিদেরকে কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেন: সূর্যোদয় থেকে উর্ধ্বে উঠা পর্যন্ত। মধ্যদুপুরে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত। সূর্য যখন অস্ত যাওয়ার উপক্রম করে তখন থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।»(বর্ণনায় মুসলিম
কার্টেসীঃ=
https://www.muslimbd24.com/
https://www.sonalinews.com
http://www.kholakagojbd.com/religion/12885
http://secrethealthcarebd.blogspot.com/2016/06/blog-post.html
https://www.al-feqh.com/bn
http://www.bangladesherkhabor.net/Religious/17290
Comments
Post a Comment