ইসলামে সালামের তাৎপর্য ও ফজিলত কুরআন ও সুন্নাহ এর আলোকে জেনে নিন

 ইসলামে যত বিধিবিধান আছে সালাম তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ইসলামে সালামের বহু উপকারিতা ও ফজিলত আছে। আমরা মুসলমানরা পরস্পর পরস্পর দেখা হলে বলে থাকি ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ অর্থ ‘তোমার ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।’ অপর ভাই জবাবে বলে ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ’ অর্থ : ‘তোমার ওপরও শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।’ কত সুন্দর অভ্যর্থনা। কেউ সালাম দিলে তার জবাব উত্তমভাবে দেওয়ার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন : যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর। (সূরা নিসা ৮৬ আয়াত)।


সালামের প্রচলন আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাহিস সালামের থেকেই শুরু হয়েছে যেমন হাদিসে এসেছে, “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম (আ.)-কে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে সৃষ্টি করে বলেন, যাও এবং অবস্থানরত ফেরেশতাদের ঐ দলটিকে সালাম করো। আর তাঁরা তোমার সালামের উত্তরে কি বলে তা শ্রবণ করো। তাঁরা যে উত্তর দেবে তা তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের উত্তর। অতঃপর আদম (আ.) গিয়ে তাঁদের উদ্দেশে বললেন ; ‘আসসালামু আলাইকুম’। অতঃপর ফেরেশতারা উত্তর দিলেন, ‘আসসালামু আলায়কা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : তাঁরা (ফেরেশতাগণ) ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ অংশটি বৃদ্ধি করেছেন। (মিশকাত : ৪৬২৮)।



পৃথিবীতে যত উত্তম কাজ আছে সেসবের মধ্যে সালাম অন্যতম। কেননা যখন সাহাবিরা রাসুলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে ইসলামে সর্বোত্তম কাজ কি? তার জবাবের এক পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন যে সালামের প্রসার করা। যেমন হাদিসে এসেছে, “আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, সর্বোত্তম ইসলামি কাজ কী? তিনি বললেন, (ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে। (বুখারি-মুসলিম)। এ হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী আমাদের উচিত পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া। যে ব্যক্তি আগে সালাম দিবে সে অহংকার থেকে মুক্ত বলে প্রমাণিত হবে। যেমন হাদিসে এসেছে, হজরত উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হলো ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। (মিশকাত)।


সালামের বিশেষ একটা কাজ রয়েছে সেটা হলো অন্যের গৃহে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে অনুমতি নেওয়া। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনেও উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন : হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। (সূরা নূর ২৭ আয়াত)। আবার তিনি অন্যত্র বলেন, যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন। (সূরা নূর ৬১ আয়াত)।



এটা খুবই কার্যকরী একটা কাজ। আমরা অনেক সময় ইতস্তত হয়ে পড়ি যে কীভাবে অনুমতি নিব? কীভাবে কথা শুরু করব? অথচ ইসলাম আমাদেরকে উত্তম পদ্ধতির কথা জানিয়ে দিয়েছে সেটা হলো সালামের মাধ্যমে অনুমতি নেওয়া ও সালামের মাধ্যমে কথা শুরু করা। হাদিসে এসেছে রাসুল সা. বলেছেন, যে প্রথমে সালাম দেবে না, তাকে (প্রবেশের) অনুমতি দিও না। (সহীহুল জা’মে হা : ৭১৯০)।


সুতরাং সালামের উপকারিতা ও ফজিলত অনেক বেশি। কাজেই আমাদের সকলের উচিত জীবনের সর্বাবস্থায় সালামের প্রসারে কাজ করা। পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।

Comments

Popular posts from this blog

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাআত সংখ্যা, কত প্রকার ও কি কি

সকল সহিহ হাদিস বই PDF Download এক সাথে

নামাজে আমরা যা বলি, তার অর্থ জানলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবেনা